ঢাকা , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমেরিকাই কি ব্রিকসকে এগিয়ে দিচ্ছে? কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় নারী আইনজীবীর মৃত্যু রাজধানীতে অবৈধ ওয়াকিটকি ব্যবসায় জড়িত দু’জন গ্রেফতার চাটমোহরে ওএমএসের আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে মানুষ এস আলমের দুই ছেলেসহ ১০ জনের নামে মামলা ফরিদপুর-৪ আসনে ভাঙ্গার দু’ইউনিয়ন নিয়ে হাইকোর্টে রিট বাগেরহাটের ৪ আসন বহালের দাবিতে মিছিল দু’দিন হরতাল পুলিশের মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী মৃত্যুশয্যায় বেবিচকের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া মা-নবজাতকের যত্নে পরিবর্তন আনছে স্বাস্থ্যশিক্ষা ১৩ ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল ডাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকের মৃত্যু পাট পণ্যের উপযোগিতাকে প্রাধান্য দিতে হবেÑ বাণিজ্য উপদেষ্টা গুণতে হবে বিপুল টাকা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ভিপি প্রার্থী তাহমিনার ঢাবির কিছু শিক্ষক শিবিরের ভাষায় কথা বলছেন-নাছির শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, দিনভর আলোচনা নানা ঘটনা নেপালে বিক্ষোভ-প্রাণহানির জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
গবেষণা প্রতিবেদন

মা-নবজাতকের যত্নে পরিবর্তন আনছে স্বাস্থ্যশিক্ষা

  • আপলোড সময় : ১০-০৯-২০২৫ ১২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০৯-২০২৫ ১২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন
মা-নবজাতকের যত্নে পরিবর্তন আনছে স্বাস্থ্যশিক্ষা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নূরা হেলথ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, হাসপাতালে দেওয়া স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মসূচি মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতর (ডিজিএইচএস) এবং নূরা হেলথ বাংলাদেশ যৌথভাবে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে একটি অনুষ্ঠানে গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্পেশাল কেয়ার নিওনেটাল ইউনিট (স্ক্যানু)-এ নূরা হেলথ-এর ‘কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রাম (সিসিপি)’ সেশনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। নূরা হেলথ দেশের ১৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থিত স্ক্যানু-তে এই কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রাম (সিসিপি)-এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করে। গবেষণায় দুটি পদ্ধতি তুলনা করা হয়- প্রচলিত সেবা দেওয়া এবং কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার আগে নবজাতক ও প্রসব-পরবর্তী যত্নের ওপর স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া। যে সকল নবজাতককে স্ক্যানু-তে ভর্তি করা হয়েছিল, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ৩০ দিন এবং ৬০ দিনের মাথায় তাদের মায়েদের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, সিসিপি কর্মসূচির ফলে মায়ের স্বাস্থ্যজ্ঞান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার হার বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাড়িতে যত্নের মান বাড়ে এবং মা ও নবজাতক উভয়েরই হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হওয়ার হার কমে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সেশন পাওয়া মায়েদের মধ্যে সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুশীলনের হার বেড়েছে। নূরা হেলথ-এর মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জাকিয়া ইয়াসমিনের উপস্থাপিত গবেষণা ফলাফল অনুযায়ী, যেসব মা এই শিক্ষাসেবা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো (ইবিএফ) সম্পর্কে সচেতনতা দ্বিগুণ বেড়েছে এবং এই চর্চার হার ২৬% বাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও এই কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়: যারা সিসিপি সেশন পেয়েছেন তাদের মধ্যে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) সম্পর্কে সচেতনতা ৫৯% বেড়েছে, যেখানে সেশন না পাওয়াদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২৩%। কেএমসি পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুর যত্ন নেওয়ার হারও দ্বিগুণের বেশি হয়েছে: সিসিপি গ্রুপে ২৮% মা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, আর অপর গ্রুপে এই হার ছিল মাত্র ১৩%। স্বাস্থ্যশিক্ষা গ্রহণকারী মায়েদের বেলায় শিশুকে খাওয়ানর পর ঢেকুর তোলানোর অভ্যাসও ৭৭% বেশি দেখা গেছে এবং নাভির যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে, হাত ধোয়া এবং নবজাতকের বিপদচিহ্নগুলো শনাক্ত করার মতো বিষয়গুলোতে সচেতনতার হার খুব বেশি বাড়েনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. মো. আবু জাফর। মহাপরিচালক বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করা আমাদের জাতীয় লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, ডিজিটালাইজেশন এবং সমাজের সর্বস্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রাম (সিসিপি)-এর মাধ্যমে নূরা হেলথ এই সব গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে কাজ করছে। এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ সাইদুল হক বলেন, নার্সদের পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার এবং ব্যবস্থাপকদেরও এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা (এমআইএস)-এর সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিসিপি প্রোগ্রাম থেকে প্রাপ্ত ডেটা যেন মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত দৃশ্যমান হয়, তার ব্যবস্থা করা উচিত। নূরা হেলথ বাংলাদেশের কো-কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. আরেফিন অমল ইসলাম নূরা হেলথ বাংলাদেশের কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০২২ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে নূরা হেলথ বাংলাদেশ প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দিয়েছে। পাশাপাশি, নূরা হেলথ বাংলাদেশ দেশের ৫৬৫টি হাসপাতালের প্রায় ৩ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং মিডওয়াইফকে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্তমানে প্রশিক্ষিত মাস্টার ট্রেইনার এবং সিসিপি প্রশিক্ষকেরা রোগীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্ক্যানু, এএনসি, পিএনসি, জেনারেল মেডিসিন, জেনারেল সার্জারি এবং অসংক্রামক রোগ (উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস) বিষয়ক স্বাস্থ্যশিক্ষা দিচ্ছেন। ডা. আরেফিন বলেন, আমরা চাই কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রামকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং এটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত হোক। নূরা হেলথ-এর কো-সিইও ডা. শাহেদ আলমও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এই পার্টনারশিপ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হাসপাতালের নার্সেরা প্রতিদিন পরিচর্যাকারীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে সহায়তা করছেন বলেই দেশব্যাপী এই ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আমরা এখন আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রে আমাদের কাজকে প্রসারিত করতে চাই। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। এই আয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী। তিনি জানান, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সময় থেকেই নূরা হেলথ বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। সমাপনী বক্তব্যে ড আফরিনা মাহমুদ বলেন, কেয়ার কম্প্যানিয়ন প্রোগ্রামের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। কেন্দ্রীয় এবং লোকাল পর্যায়ের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এবং সিস্টেমেটিক মনিটরিং ও কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে এই প্রোগ্রামকে আরও অর্থবহ করে তোলা সম্ভব।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স